মিছবাহ উদ্দিন:
দখল ও দুষণে মৃতপ্রায় ঈদগাঁও নাসিরখাল। ময়লা- আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হওয়ায় যৌবন হারিয়েছে খালটি। খালের উভয় পাশ থেকে দখল করে নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা। ফলে সরকারি জমি দখল হওয়ার সাথে সাথে পরিবেশ-প্রকৃতি চরম হুমকির মুখে পড়ছে। অথচ একটু উদ্যোগ নিলে পরিত্যক্ত এই নাসিরখালটি বিনোদন স্পটে পরিণত করা সম্ভব। ঢাকা হাতির ঝিলের আদলে গড়ে উঠতো পর্যটক লেক। নাসির খালটি কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাস থেকে পশ্চিম পাস হয়ে বয়েগেছে মহেশখালী চ্যানেলে। এই নাসির খালের উপর রয়েছে গাড়ি চলাচলের ব্রিজ। মহাসড়কটি নাসির খালের বুক চিড়ে সংযুক্ত হয়েছে সমুদ্র কন্যার শহর কক্সবাজার। পর্যটন স্পট গড়ে তুললে দেখা যাবে উপরে গাড়ি নিছে নৌকা চলাচলের দৃশ্য। নাসির খাল খনন, উভয়পাসে পাড় নির্মাণ, পর্যটক যাতায়াতের রাস্তা সংস্কার, ভ্যালি ব্রিজ নির্মাণ, চারাগাছ রোপণ, ফুল বাগান, ঝর্ণাসহ পরিপূর্ণ লেক গড়ে তুলার যাবতীয় উপকরণ স্থাপন করা হলে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এ পর্যটক লেক। ঈদগাঁও উপজেলায় এটিই হবে একমাত্র বিনোদন স্পট। তাছাড়া বিশ্বরোড সংলগ্ন ও ঈদগাঁও বাজারের পাশাপাশি হওয়ায় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, নিরাপত্তা, যাতায়াত ব্যবস্থা সবকিছুই নিশ্চিত করা সম্ভব এই পর্যটক লেকে। এদিকে লেকটি বিশ্বরোড সংলগ্ন হওয়ায় স্থানীয়দের পাশাপাশি কক্সবাজার মুখী দেশীয় ও বিদেশী মানুষের নজর কাড়বে। ফলে নাসির খাল রক্ষার পাশাপাশি মোটা অংকের রাজস্ব আয়ের উৎস হবে এ পর্যটক লেক। পরিবেশবাদীরা দ্রুত এটি বাস্তবায়নে সরকারের সুদষ্টি কামনা করেছেন। বর্তমানে সরকারি সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় নয়নাভিরাম এই নাসির খালটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাছে। দ্রুত উদ্যোগ না নিলে বিলুপ্ত হতে পারে প্রাচিন এই নাসির খালটি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা ঈদগাঁও উপজেলার সভাপতি মোঃ রেজাউল করিম বলছেন, ঈদগাঁওর নাসিরখালটি ঐতিহ্যবাহী একটি খাল। দখল ও দূষণ বর্তমানে এটি মৃতপ্রায়। অস্তিত্ব হারাতে বসা এ খালটি এক সময় মিঠা পানির মাছের আধার ছিল। এখাল কেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি বিয়োগান্তক ঘটনাও ঘটেছে। যা এলাকাবাসীকে মারাত্মক পীড়া দিয়েছে। স্থানীয় মৎস্যশিকারীর প্রায় প্রতিদিন এখানে মাছ শিকার করে পারিবারিক ও প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতেন। ছোটকালে আমি ও আমার বড় ভাই রুহুল আমিনের সাথে গভীর রাতে বেশ কয়েকবার এখালে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। কোন সময় এখালটিতে ড্রেজিং হয়নি। বর্তমানে গভীরতা খুবই কম। প্রাকৃতিক মাছের আধার দিন দিন কমে যাচ্ছে। যা এলাকাবাসীর জন্য দুঃসংবাদ বটে। চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কের ঈদগাঁও আলমাছিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা এবং ঈদগাহ রশিদ আহমদ কলেজের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে উভয় দিকে বয়ে যাওয়া এখাল কেন্দ্রিক পর্যটন সম্ভাবনাও রয়েছে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে পর্যটন উন্নয়নে পদক্ষেপ নিলে এটি হতে পারে একটি সুন্দর ও মনোরম পর্যটন স্পট। কাপ্তাই লেকের মত পুরো বছর পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করলে লেক কেন্দ্রিক অপার পর্যটনের সম্ভাবনা হাতছানি দিয়ে ডাকবে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এলাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি, নিখুঁত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ সহ বিনোদনের নানা অনুষঙ্গ সৃষ্টি হবে। এখাত থেকে সরকারও প্রচুর রাজস্ব আয় করতে পারবে।
মানবাধিকার নেতা বেলাল উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিনের দাবী ঈদগাঁও উপজেলা হলেও প্রায় দুই লক্ষ জনগোষ্ঠীর এই জনপদে বিনোদন স্পট নেই। পরিত্যক্ত নাসির খালটি সংস্কার করে পর্যটন লেখ বাস্তবায়ন করা হলে ঈদগাঁওতে বসে হাতির ঝিল পর্যটন লেকের স্বাধ গ্রহণ করতে পারবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলছেন ঈদগাঁও নাসির খালটি পর্যটক লেক হিসাবে গড়ে তুলার সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। দখল ও দূষণ থেকে রক্ষা করে পরিত্যক্ত এই খালটিকে বিনোদন স্পটে পরিণত করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও সাবেক ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরী বলেন এই নাসি খালটি আমার শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত। মাছ দেখা ও গোসল করাসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে এই খাল ঘিরে। চির যৌবন দীপ্ত এই খালটি নাজুক অবস্থা দেখে খুবই কষ্ট হয়। এটিকে পর্যটক লেক করে আবারো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে। ঈদগাঁওবাসীর জন্যে বিনোদনের খোরাক হবে। এই নাসি খালকে পর্যটন লেক করার বিষয়ে প্রয়োজনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান বাহাদুর মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর সাথে কথা বলে সহযোগিতার চেষ্টা করবো। পাশাপাশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতি এ বিষয়ে সহযোগিতা কামনা করছি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় বলেন নাসির খালটি সরেজমিন দেখে দখল ও দূষণের কবল থেকে রক্ষা করার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর এই নাসির খালকে ঘিরে পর্যটন লেক গড়ে তুলার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কথা বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।